ফারহানা পারভীনঃ
মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা শরণার্থী রোহিঙ্গা নারীদের একটা বড় অংশ বর্মী সেনাবাহিনীর হাতে যৌন নিগ্রহের শিকার হয়েছেন।
অনেকে যৌন নির্যাতনের পর হত্যার শিকার হয়েছেন বলে পালিয়ে আসা পরিবারগুলো বলছে।
বাংলাদেশের ভূখণ্ডে এসে এসব নারীরা লোকলজ্জার ভয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে পারছেন না বলে বলছেন স্থানীয় চিকিৎসকরা।
হাজেরা বেগম উখিয়াতে পালিয়ে এসেছেন আজ তিন দিন।
তিনি বলছিলেন, সেনাবাহিনী তাদের বাড়ি ঘেরাও করে।
যারা পালিয়ে গিয়েছিল তারা প্রাণে বেঁচে গেছেন। আর যারা পালাতে পারেননি তারা হয় নিহত হয়েছে নয়ত তার মতই যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন।
তিনি বলছিলেন “নির্যাতনের পর আমার মত অনেক নারীই চিকিৎসা নিতে চেয়েছে। বিশেষ করে যাতে করে গর্ভধারণের ঝুঁকি মুক্ত থাকা যায় সেজন্য ওষুধ পর্যন্ত চেয়েছে। কিন্তু পায়নি। আমি নির্যাতনের পরেও প্রাণে বেঁচে গিয়েছি। কিন্তু অনেক মেয়ে আছে যাদের ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে।”
বাংলাদেশে ২৫শে অগাস্টের পর যত মানুষ বাংলাদেশে প্রবেশ করেছেন তার একটা বড় অংশ নারী এবং শিশু।
তারা বলছেন, পুরুষরা যেমন হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছে তেমনি নারীরা হয়েছে যৌন নির্যাতনের শিকার।
আরেকজন নারী তার এক শিশু সন্তানকে নিয়ে পালিয়ে আসতে পেরেছেন।
কিন্তু তার ১৫ বছরের মেয়েকে হারিয়ে ফেলেছেন।
তিনি বলছিলেন, “আমার মনে হচ্ছে সেনাবাহিনীর হাতে সে ধরা পড়েছে এবং নির্যাতনের শিকার হয়েছে। আমি এখনো তার কোন খোঁজ পাইনি।”
নারীদের ওপর কী নৃশংসভাবে যৌন নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তার বর্ণনা দিচ্ছিলেন মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা মো. ইলিয়াস।
তিনি বলছিলেন, তারা যখন পালিয়ে আসেন তখন একজন নারীকে তিনি ধর্ষিত হতে দেখেছেন। কোলে তার শিশু সন্তান ছিল। পরে ঐ নারীর অর্ধপোড়া মরদেহ তারা দেখতে পান আরো পাঁচটি মরদেহের সাথে।
এদিকে, কক্সবাজারের বিভিন্ন উপজেলায় যেসব নারী ও শিশু আশ্রয় নিয়েছে তাদের প্রাথমিক স্বাস্থ্য দেয়ার ব্যবস্থা নিয়েছে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা এবং সরকারের স্থানীয় পর্যায়ের চিকিৎসকরা।
তারা বলছেন, ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতনের বিষয়ে নারীরা মুখ খুলছেন না তাই তাদের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা দেয়ার কাজটা কঠিন হয়ে পড়েছে।
উখিয়ার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ বলছিলেন, এখন পর্যন্ত তারা ১৮টি ঘটনার কথা জানতে পেরেছেন। তবে তিনি বলছিলেন এই সংখ্যা আরো বেশি।
“গতকাল আমি ছয়জন মায়ের সাথে কথা বলেছি, তাদের কোলে সন্তান ছিল। তারা বলছেন, তারা বার্মার মিলিটারির হাতে ‘জুলুমের শিকার’ হয়েছে। তাদের চেহারায় বেদনা,কষ্ট, আর আতংকের ছাপ রয়েছে।”
মি. আহমেদ বলছিলেন, “আমরা মাঠ পর্যায়ের যে তথ্য পাচ্ছি তাতে সংখ্যাটা কম নয়, যেটাতে আমাদের শঙ্কার-আশঙ্কার জায়গা তৈরি হচ্ছে।”
স্বাস্থ্যকর্মীরা এখন ক্যাম্পে ক্যাম্পে যেয়ে খোঁজ নিচ্ছেন যাতে করে তাদের চিকিৎসা দেয়া সম্ভব হয়।
যৌন নির্যাতনের শিকার যেসব নারীদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে তাদের কাউন্সেলিং বা পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
তবে স্বাস্থ্যকর্মীরা বলছেন, তাদের যদি সনাক্ত না করা যায় তাহলে বড় ধরণের স্বাস্থ্য ঝুঁকির মধ্যে পরতে পারেন তারা।
সূত্র, বিবিসি